বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীণ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির আমৃত্যু সদস্য। আজ ১৫ জুন শনিবার তাঁর মৃত্যুর চার বছর পূর্ণ হলো। তবে মৃত্যুর দীর্ষ চার বছরেও তাঁর সম্মানে ‘দলীয় ব্যানারে’ আনুষ্ঠানিকভাবে শোক সভা করতে পারেনি
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। দলীয় অন্যান কর্মসূচি যথারীতি পালন করলেও ১৭ বছর সিলেট শহর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা প্রয়াত এই নেতার ‘দলীয় শোকসভা’ পালনে নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন দায়িত্বশীলরা।
এদিকে কামরানের স্মরণে চার বছরের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে শোক সভা পালন করেছে সিলেট সিটি করপোরেশেন। কামরানের মৃত্যুর তিন বছর মেয়রের চেয়ারে আরিফুল হক চৌধুরী (বিএনপি নেতা) থাকলেও এরকম আয়োজন করতে দেখা যায়নি। তবে মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর এবার কামরান স্মরণে আনুষ্ঠানিকভাবে শোক সভা পালনের উদ্যোগ নেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে মেয়র হওয়া আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর আমানউল্ল্যাহ কনভেনশন হলে এই আয়েজনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন।
প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেল ২০২০ সালের ১৫ জুন দিবাগত রাত ৩ টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান ‘জনতার কামরান’ খ্যাত এই নেতা।
সিলেটের রাজনীতিরই মহীরুহ ছিলেন কামরান। এক কথায় বলতে গেলে তিনি সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুধু দল নয় দলের বাইরে সাধারণ মানুষও তাকে ভালোবাসতে। এ কারণে ১/১১’র সময় জেলে থেকেও মেয়র নির্বাচিত হন।
সিলেটের মানুষ তাকে ‘জনতার কামরান’ হিসেবেই চিনতেন। অথচ এই নেতাকে দল যেন ভুলতে বসেছে প্রায়!
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, কামরানের মৃত্যুতে চার বছর পার হয়ে গেল। অথচ আমরা এখনও দলীয় শোকসভা করতে পারলাম না। বিষয়টা আমাদের জন্য হতাশার। মনে হচ্ছে কামরান ভাইয়ের জন্য সময় নেই আওয়ামী লীগের!
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন সিলেটভিউকে বলেন, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান আমাদের আবেগের জায়গা। তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন। আজ তার ৪র্থ মৃত্যুবাষির্কীতে কবরস্থানে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেন করেছি। এছাড়া কামরান ভাইয়ের পরিবারকে নিয়ে আমরা সকালে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করেছি।
দলীয় শোকসভা আয়োজনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা কামরান ভাইকে সবসময় অনুভব করি। তাকে প্রতিনিয়তই মনে পড়ে। দলীয় শোকসভা পালনের ব্যাপারে দলীয়ভাবে আলোচনা করা হবে।
এদিকে কামরানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে ২ দিন ব্যাপী কর্মসূচি গ্রহন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে খতমে কোরআন, মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল এবং শিরনী বিতরণ। পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুম কামরানের জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করে সবার কাছে দোয়া কামনা করা হয়।
এক নজরে কামরান
বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেট জন্মগ্রহণ করেন। সিলেট পাইলট স্কুলে ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি কামরানের। ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯- এর গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। এরপর ৭৩-এ
সিলেট পৌরসভা নির্বাচনে কমিশনার পদে বিপুল ভোটে জয়ী হন কামরান। তখন তিনি মাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। সিসিকে আজ পর্যন্ত এত অল্প বয়সে জনপ্রতিনিধি হতে পারে নি।
সিলেট সিটি করপোরেশন গঠনের পর পৌরসভার চেয়ারম্যান থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র, এরপর নির্বাচিত মেয়র হন। ১৯৮৯ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন কামরান। ১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মহানগর গঠিত হলে ২০০২ সালে প্রথমবারের মত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৫ এ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব পান। টানা তিন মেয়াদে দেড় যুগ মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে তবে গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতির পদ ছেড়ে দেন কামরান। প্রায় তিন দশক কামরানবিহীন পথচলা শুরু হয়
সিলেট আওয়ামী লীগের। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ পাওয়া কামরান বর্তমান কমিটিতেও একই পদে ছিলেন।
এদিকে রাজনীতিবিদ কামরান জনপ্রতিনিধি হিসেবেও ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। ১৯৭৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকাবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান জনতার কামরান। সেই থেকে সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন তিনি। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। মাঝপথে খানিকটা বিরতি ছিল প্রবাসে যাওয়ায়। সেবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। প্রবাস থেকে ফিরেই ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। ২০০৩ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে তিনি বিএনপি সর্মথিত প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসে নাম লেখান তিনি।
১/১১’র সময়ে দুইবার কারাবরণ করেন কামরান। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। সর্বশেষ দুটি সিটি নিবার্চনে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন কামরান।